যুক্তরাষ্ট্র
বিতর্কিত রেমিট্যান্স ফেয়ারে ধাক্কা : যাচ্ছেন না গভর্নর

শেষ সময়ে এসে বড় ধাক্কা খেল নিউইয়র্কের বিতর্কিত রেমিট্যান্স ফেয়ার। শনিবার প্রধান অতিথি হিসাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান মনসুর মেলা উদ্বোধনের কথা ছিল। আয়োজকরা সে কথা সর্বত্র প্রচারও করে। যাকে ঘিরে এ মেলা সেই গভর্নরই নিজেই জানালেন তিনি মেলায় যাচ্ছেন না। শুক্রবার আমেরিকা সফরে এসে বিমান বন্দরে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
মনসুর বলেন, ‘এখান একটি রেমিট্যান্স মেলা হচ্ছে তা আমরা জানি। কিন্তু সেটাকে নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। আমরা কোন বিতর্কিত পরিস্থিতির মধ্যে যেতে চাই না। সেটাকে এভয়েড (এড়িয়ে চলা) করতে চেষ্টা করি। তাই সেখানে আমরা যাচ্ছি না। তবে যারা রেমিট্যান্সের সঙ্গে স্টেকহোল্ডার, সরকারি ভাবে আমরা তাদের নিয়ে বসব। বসে আলোচনা করব কিভাবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে কিভাবে প্রবাসী আয় সহজে দেশে নেয়া যায়।’
এদিকে রাতেই রেমিট্যান্স মেলার উদ্যোগে লার্গোডিয়া ম্যারিয়ট হোটেলে ‘ওয়েলকাম ডিনারের’ আয়োজন করা হয়েছে। তাতেও গভর্নরসহ অন্যরা থাকছেন। তবে সেখানেও গভর্নর যাচ্ছেন না বলে জানা গেছে।
শনিবার ১৯ এপ্রিল নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটস্থ সানাই রেষ্টুরেন্টে গভর্নরের এই মেলা উদ্বোধন করার কথা ছিল। সেখানে না গিয়ে তিনি বাংলাদেশ কনস্যুলেট অফিসে প্রবাসী বাংলাদেশিদের সাথে রেমিট্যান্স ও অন্যান্য ইস্যুতে মত বিনিময় করবেন ১৯ এপ্রিল বিকেলে।
বিতর্কিত এই ‘রেমিট্যান্স মেলায়’ বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর ও একাধিক ব্যাংকের চেয়ারম্যানের যোগদানকে কেন্দ্র করে নিউইয়র্কে বাংলাদেশ কমিউনিটি বিভক্ত হয়ে পড়েছে। গত ২ মাস ধরে নিউইয়র্কের বই ব্যবসায়ী, বাৎসরিক বইমেলা ও বৈশাখী উৎসবের আয়োজক বিশ্বজিৎ সাহা ১৯-২০এপ্রিল রেমিট্যান্স মেলার আয়োজনের জানান দিচ্ছেন। এই মেলার কনভেনর হচ্ছেন ড. জিয়াউদ্দীন আহমেদ। প্রধান সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করছেন বিশ্বজিৎ সাহা। পত্রিকায় বিজ্ঞাপনও দিয়েছেন এই মেলার। যাতে উল্লেখ করা হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর প্রধান অতিথি হিসেবে মেলা উদ্বোধন করবেন।
এই উদ্যোগ ঘিরে ৫ আগষ্ট ছাত্র জনতার নেতৃত্বে অভ্যুত্থানের সর্মথকদের মধ্যে বিরুপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। অনেকে প্রকাশ্যে বলতে থাকেন, মেলার আয়োজক গত ১৭টি বছর ফ্যাসিবাদের দোসর ছিলেন। ঢাকায় গিয়ে শেখ মুজিবের উপর একাধিক ডকুমেন্টারি তৈরি করে শেখ হাসিনার নজরে আসার চেষ্টা করেছেন। মন্ত্রীদের নিয়ে অনুষ্ঠান করেছেন। তা’ছাড়া রেমিট্যান্স ব্যবসার সাথেও তিনি জড়িত নন।
বির্তকিত বিশ্বজিৎ সাহার এই মেলায় গভর্নরের যোগদানের খবরে যুক্তরাষ্ট্রস্থ বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন গত ১২ এপ্রিল এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। তারা ঘোষণা দেন, ফ্যাসিবাদের দোসর বিশ্বজিৎ সাহার মেলায় গভর্নর ও বিভিন্ন ব্যাংকের চেয়ারম্যান যোগ দিলে লার্গোডিয়া ম্যারিয়ট হোটেল ও সানাই রেস্টুরেন্টের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হবে। এ সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন গিয়াস আহমেদ, ডা ওয়াজেদ আলী খান, আবু তাহের, জাকারিয়া মাসুদ জিকু, দেলোয়ার হোসেন শিপন,আব্দুল কাদের, কাজি মোহাম্মদ হাসান সিদ্দিক, মামুনুর রশীদ,ফরিদ আলম, মমিন মজুমদার, মুশফিকুর রহমান ও আল আমিন রাসেল।
শুক্রবার বিকেলে গর্ভনর নিউইয়র্কে আসেন। এদিন রাতেই রেমিট্যান্স মেলার উদ্যোগে লার্গোডিয়া ম্যারিয়ট হোটেলে ‘ওয়েলকাম ডিনারের’ আয়োজন করা হয়েছে। সেখানেও গভর্নর আমন্ত্রিত। এতেও গভর্নর যোগদান না করলেও দু-একটি প্রাইভেট ব্যাংকের চেয়ারম্যান এই ডিনার ও মেলায় যোগদানের সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিকে ১৬ এপ্রিল বিশ্বজিৎ সাহা ‘রেমিট্যান্স মেলায়’ যোগদানের জন্য স্থানীয় সাংবাদিকদের আমন্ত্রন জানিয়েছেন। তিনি স্পষ্ট করে উল্লেখ করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, ডেপুটি গভর্নর ও বিভিন্ন ব্যাংকের চেয়ারম্যান তার ১৯-২০ এপ্রিলের রেমিট্যান্স মেলায় উপস্থিত থাকবেন। ১৯ এপ্রিল বিকেল ৩টায় উদ্বোধন করা হবে। চলবে রাত ৮টা পর্যন্ত। বিশ্বজিৎ সাহার প্রেস বিজ্ঞপ্তি অনুসারে এই মেলায় ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ওবায়েদ উল্লাহ মাসুদ, ডেপুটি গভর্নর হাবিবুর রহমান,এনসিসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান নুরুন নেওয়াজ ও ব্যাংকস এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান আব্দুল হাই সরকারেরও এই মেলায় যোগ দেবার কথা।
এদিকে নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেট অফিসে প্রায় একই সময়ে গভর্নরের কর্মসূচি রয়েছে। ১৯ এপ্রিল বিকেল ৫টায় তিনি প্রবাসী বাংলাদেশিদের সাথে মত বিনিময় করবেন। রেমিট্যান্স ব্যবসায়ীদের সাথেও গভর্নর আলাদাভাবে কনস্যুলেটে বসবেন। এই মতবিনিময় সভায় প্রবাসীদের যোগদানের জন্য কনস্যুলেট অফিস থেকে আমন্ত্রন জানানো হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনর আইএমএফ এর সভায় যোগ দিতে ২০ এপ্রিল ওয়াশিংটনে আসছেন।